Skip to main content

শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখছেন তো?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, মানসিক স্বাস্থ্য সামগ্রিক সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে পেশাদার সাফল্য পর্যন্ত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের যে গভীর প্রভাব রয়েছে তা মানুষ চিনতে শুরু করেছে। তাই শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখাটাও এখন খুব জরুরী।

মানসিক স্বাস্থ্য কী?

মেন্টাল হেলথ কী তা বুঝতে হলে প্রথমে আমাদের জানতে হবে স্বাস্থ্য কী। খুব সহজ করে বললে স্বাস্থ্য হলো ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিন অবস্থার একটি সুস্থ সমন্বয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি একজন মানুষের স্বাস্থ্য হলো রোগ বালাই মুক্ত শরীর এবং সেই সঙ্গে ভয়, হতাশা, বিষন্নতা, মানসিক চাপ ইত্যাদি থেকে মুক্ত মন এবং সমাজে বসবাস করতে গিয়ে কোন সামাজিক বাধার সম্মুখীন না হওয়া।

মেন্টাল হেলথ জরুরী

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যত কুসংস্কার ও ভুল ধারণাঃ

এই সমস্যা মোকাবেলায় প্রধান বাধাগুলির মধ্যে একটি হল এটিকে ঘিরে থাকা অসংখ্য ভুল ধারণা। অনেক ব্যক্তি এখনও বিশ্বাস করেন যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দুর্বলতা বা ব্যক্তিগত ব্যর্থতার লক্ষণ। যাইহোক, মানসিক স্বাস্থ্য চরিত্র বা শক্তির প্রতিফলন নয় বরং মানুষের সুস্থতার একটি দিক যার জন্য শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই যত্ন ও মনোযোগ প্রয়োজন। যারা মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য সহানুভূতি এবং সমর্থন বাড়ানোর জন্য এটি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বঃ

মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া বিভিন্ন কারণে অপরিহার্য। প্রথমত, মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের আবেগ, চিন্তাভাবনা ও আচরণকে প্রভাবিত করে, আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা ও মিথস্ক্রিয়াকে আকার দেয়। একটি সুস্থ মন স্থিতিস্থাপকতা, আশাবাদ ও পরিপূর্ণতার বোধ জাগিয়ে তোলে। দ্বিতীয়ত, মানসিক স্বাস্থ্য শারীরিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। অসংখ্য গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। চিকিৎসা না হলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। অবশেষে, মানসিক স্বাস্থ্য সৃজনশীলতা এবং সাফল্যকে প্রভাবিত করে। যখন মানসিক স্বাস্থ্য অবহেলিত হয়, তখন ব্যক্তিরা একাগ্রতা, সমস্যা সমাধান এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয় যা তাদের সামগ্রিক কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে।

শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখুন

কোনগুলো মানসিক সমস্যাঃ

মানসিক সমস্যা হচ্ছে চিন্তা, আচরণ ও আবেগের পরিবর্তনের কারনে যদি ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনযাত্রার গুনগত মান কমে যায়, ব্যক্তি ও সামাজিক সম্পর্ক ব্যাহত হয় এবং তার পেশাগত দক্ষতা হ্রাস পায় তাহলে তাকে মানসিক সমস্যা বলে।

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণঃ
  • শৈশব নির্যাতন
  • ট্রমা বা অবহেলা
  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব
  • সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, দরিদ্রতা বা ঋণ
  • বর্ণবাদ সহ বৈষম্য এবং কলঙ্কের সম্মুখীন হওয়া
  • শোক (আপন কাছের কাউকে হারানো)

মানসিক রোগঃ

মানসিক অসুস্থতা, যা মানসিক ব্যাধি বা মানসিক রোগ হিসেবেও পরিচিত, এটি এমন এক মেডিকেল কন্ডিশন যা একজন ব্যক্তির চিন্তাভাবনা, আবেগ, আচরণ এবং সামগ্রিক মানসিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে। এই সমস্যা একজন ব্যক্তির কাজ করার এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করার ক্ষমতার উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক অসুস্থতা বৈচিত্র্যময়। বিষণ্নতা ও উদ্বেগের মতো অপেক্ষাকৃত সাধারণ অবস্থা থেকে সিজোফ্রেনিয়া ও বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো আরও গুরুতর ব্যাধি পর্যন্ত হতে পারে।

মনোসামাজিক সমস্যা

মনোসামাজিক সমস্যা কীঃ

ব্যক্তির মানসিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থাকে একত্রে মনোসামাজিক অবস্থা বলা হয়। একজন মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া কোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা বা নির্যাতনের ঘটনা তার মনোসামাজিক অবস্থার উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে এবং তার ফলে একই সঙ্গে যে মানসিক ও সামাজিক সমস্যা তৈরি করে তাকে মনোসামাজিক সমস্যা বলে। যেমন কোনো নারী বা শিশু যদি এসিড নিক্ষেপ বা ধর্ষনের শিকার হয় তখন সে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক ভাবে প্রচন্ড আঘাত পায়। আবার এই ধরনের ঘটনা ঘটে গেলে আমাদের সমাজে প্রায় সময় ভুক্তভোগীর উপরই দোষ চাপানো হয়, এতে ভুক্তভোগী আত্মবিশ্বাস ও মনোবল হারিয়ে ফেলে।

প্রাথমিক মানসিক সহায়তা কী?

যে কোন দূর্যোগ, সহিংসতা বা নির্যাতনের ঘটনা ঘটার পর ভুক্তভোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু কথার মাধ্যমে যে সহায়তা প্রদান করা হয় তাকে প্রাথমিক মানসিক সহায়তা বলে।

কাউন্সিলিং কী?

কাউন্সিলিং হলো বিশেষ ধরনের সাইকো থেরাপি বা মনোবিকলন পদ্ধতি। মানসিক অসুস্থতার চিকিৎসায় এবং অনেক ধরনের মানসিক অবসাদগ্রস্থ মানুষদের সাথে কথোপকথন এর মাধ্যমে তাদের সমস্যা বা রোগ নিরাময়ের চেস্টাকে কাউন্সিলিং বলে।

কাউন্সিলিং আসতে পারে পরিবার থেকেও

কোনটি কাউন্সিলিং নয়ঃ
  • ভুক্তভোগীকে শুধু উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়া
  • শুধু সমবেদনা জানানো
  • ভুক্তভোগীকে তথ্য প্রদান করা
  • শুধু সিদ্ধান্ত দেওয়া, মন্তব্য করা বা সমালোচনা করা

মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত দায়িত্ব নয় বরং একটি সামাজিক দায়িত্ব। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব স্বীকার করে, কুসংস্কার দূর করে, এবং সুস্থতার প্রচার করে, আমরা সম্মিলিতভাবে এমন একটি বিশ্ব তৈরি করতে পারি যেখানে শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের মূল্য দেয়া হয় এবং সমর্থন করা হয়। আসুন আমরা এমন স্থিতিস্থাপক সম্প্রদায় গড়ে তোলার চেষ্টা করি যা মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেয়, ব্যক্তি জীবন উন্নতি করতে এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করতে দেয়।

ছবিঃ সাজগোজ, সাটারস্টক।

The post শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখছেন তো? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/1HzE9ni
Apsara Hossain

Comments

Popular posts from this blog

স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে না তো?

আপনি যখন এই লেখাটি পড়ছেন তখন আমি বুঝতেই পারছি আপনার হাতে টেকনোলজির সুবিধা রয়েছে। যার কারণে আপনি এখন চাইলেই যে কোনো ভিডিও দেখতে পারেন, যে কোনো তথ্য সম্পর্কে জানতে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন। জীবন আগের চেয়ে এখন অনেক সহজ। তারপরও কিন্তু আমরা সবাই কমবেশি স্ট্রেসের মধ্য দিয়ে যাই। আর এই স্ট্রেস মানসিকভাবে আমাদের যতটা অসুস্থ করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই এফেক্ট ফেলছে আমাদের স্কিনের উপর। যেমন- স্ট্রেসের কারণে একনে বা প্রিম্যাচিউর এজিং সাইনস দেখা দিচ্ছে, সেই সাথে হচ্ছে ত্বকের নানা সমস্যা। স্ট্রেস কতভাবে স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে এবং কীভাবে স্ট্রেস কমিয়ে আনা যায় তা নিয়েই আলোচনা করবো আজ। স্ট্রেস কেন হয়? বিভিন্নভাবে স্ট্রেস হতে পারে। যেমন- এনভায়রনমেন্টাল বা টেম্পারেচার চেঞ্জ (এক্সটার্নাল ফ্যাক্টর)। ধরুন আপনি অনেকটা সময় ঠান্ডা রুমে ছিলেন। হুট করে যখন গরম পরিবেশে চলে আসলেন তখন শরীরে একটা স্ট্রেস হয়। আবার আর্থিক অবস্থা, লেখাপড়া, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদির কারণে সাইকোলজিক্যাল স্ট্রেস দেখা দেয়। স্ট্রেস এমন একটি বিষয় যেটার সাথেও আমরা থাকতে পারি না, যেটা ছাড়াও আমাদের থাকা সম্ভব নয়। সময়ের সাথে সাথে আমরা বেশ আধু

কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো?

একটা সময় ছিল, যখন ছবি তোলা বা কারো কাছে ক্যামেরা থাকা যেন বড়সড় ব্যাপার। স্টুডিওতে যেয়ে ছবি তুলতে হতো বা কোনো কিছুর ছবি, ভিডিও এত সহজ ছিল না। অনেকদিন অপেক্ষা করে হাতে ছবি পাওয়া যেতো এবং সেটা অ্যালবামে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করা হতো। আর এখন ছবি তোলা অনেক সহজ। বাজারের বিভিন্ন মডেলের ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল সম্পন্ন ফোন সবার হাতে হাতে। আমরা এখন চাইলেই আমাদের সুন্দর সময়গুলোর বা শখের কাজ কিংবা ঘুরতে যেয়ে মনোমুগ্ধকর প্রকৃতির ছবি, ভিডিও ক্যামেরা বন্দী করতে পারি। এখন কীভাবে পারফেক্টলি ক্যামেরা বন্দী করা যায় সুন্দর মুহূর্তগুলো তা নিয়েই টুকিটাকি টিপস শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। ক্যামেরা নিয়ে কিছু বেসিক ধারণা যেকোনো ডিভাইস ব্যবহার করার পূর্বে তার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। অনেক সময় দেখা যায় একটা ডিভাইস সম্পর্কে ঠিকভাবে না জানার কারণে ছবি তুলতে গিয়ে আমরা অনেক অপশন মিস করে ফেলি। ফলস্বরূপ ছবি সুন্দর হয় না। এই জন্য ম্যানুয়ালটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। তবে ম্যানুয়াল পড়াটা অনেকের কাছে বিরক্তিকর লাগে। তাই বিভিন্ন ফিচার নিয়ে যদি বারবার প্র্যাকটিস করা যায় তাহলে ফটোগ্রাফি বিষয়টা সহজে আয়ত্তে আসে। এখন

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina