Skip to main content

হাইপার হাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা?

ঘাম একটি প্রাকৃতিক শারীরবৃত্তিয় ফাংশন যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সর্বোত্তম স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিছু মানুষ অতিরিক্ত ঘামেন যা হাইপার হাইড্রোসিস নামেও পরিচিত, যা তাদের জীবনযাত্রার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। আজকের লেখায় আমরা হাইপার হাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের কারণ, ঝুঁকি, সুবিধা, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানবো।

কখন বলবো হাইপার হাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘাম হচ্ছে?

অতিরিক্ত ঘাম হয় তখন যখন আশেপাশের তাপমাত্রা, শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা বা মানসিক চাপের উপর ভিত্তি করে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঘাম হয়। অত্যধিক ঘাম দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে এবং সামাজিক চলাফেরায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। অত্যধিক ঘাম, বা হাইপার হাইড্রোসিস, পুরো শরীরে বা দেহের নির্দিষ্ট কিছু জায়গা যেমন হাতের তালু, পায়ের পাতা, আন্ডারআর্ম বা মুখে হতে পারে।

হাতে বা পায়ে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণগুলো কী হতে পারে?

হাইপার হাইড্রোসিস কে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি। প্রাইমারি হাইপার হাইড্রোসিস সাধারণত অতিরিক্ত তাপমাত্রা, কোন ক্লিনিক্যাল কন্ডিশন বা রোগ ছাড়াই হতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট কিছু স্থানে হয়, যেমন হাতের তালু, পায়ের পাতা, মুখমন্ডল, আন্ডারআর্ম ইত্যাদি স্থানে হতে পারে। প্রাইমারি হাইপার হাইড্রোসিস এর সঠিক কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে ধারণা করা হয় যে এটি ঘাম গ্রন্থির অতিরিক্ত সক্রিয়তার ফলে হতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বংশগতও হতে পারে।

অপরদিকে সেকেন্ডারি হাইপার হাইড্রোসিস সাধারণত কোন রোগ বা বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল কন্ডিশন বা কোন ঔষধ সেবনের কারণেও হতে পারে। এমন একটি ক্লিনিক্যাল কন্ডিশন হলো অ্যাক্রোমেগালি। এটি একটি বিরল কিন্তু গুরুতর এক রোগ। সাধারণত পিটুইটারি গ্রন্থি তে টিউমারের ফলে অতিরিক্ত গ্রোথ হরমোন নিঃসরণ হয়ে এই রোগ দেখা দেয়। এর ফলে মানবদেহের নির্দিষ্ট কিছু অংশের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে যেমন হাত, পা, কপাল, চোয়াল এবং নাক।

অন্যান্য কারণগুলো হলোঃ

    • ডায়াবেটিক হাইপোগ্লাইসেমিয়া
    • হাইপোথাইরয়েডিজম
    • লিউকেমিয়া
    • ম্যালেরিয়া
    • নানা রকম ইনফেকশন
    • কিছু বিটা ব্লকার এবং এন্টি ডিপ্রেসান্ট জাতীয় ঔষধ সেবন
    • মেনোপজ
    • নিউরোলজিক রোগ
    • ফিওক্রোমোসাইটোমা (একটি বিরল অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি টিউমার)
    • যক্ষ্মা
    • লিম্ফোমা

হাইপার হাইড্রোসিস এর একটি লক্ষণ লিম্ফোমা

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে কী কী ঝুঁকি হতে পারে?

অত্যধিক ঘাম শারীরিক অস্বস্তি, মানসিক কষ্ট এবং সামাজিক বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণ হতে পারে। শরীরের পোশাকে দৃশ্যমান ঘামের দাগ এবং শরীরের ব্যাড স্মেলের কারণে ব্যক্তি আত্মসম্মানবোধ হীনতায় ভোগেন। এছাড়া আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারে। এটি ব্যক্তিগত ও পেশাদার সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সীমিত করতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাছাড়াও, ক্রমাগত ঘাম ত্বকের ইনফেকশন এবং অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে।

এর উপকারিতা কী হতে পারে?

যদিও অত্যধিক ঘামের কারণে অনেকরকম চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হতে পারে, তারপরেও শরীরের জন্য ঘামের উপকারিতাও রয়েছে। ঘাম বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ত্বক ঠান্ডা করে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ব্যায়ামের সময় ঘাম শরীরকে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে। ত্বকের সূক্ষ্ম ছিদ্র গুলো দিয়ে ঘামের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ নির্গমন করে ত্বক ব্রণ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরে ব্যাড স্মেল হওয়া

অতিরিক্ত ঘাম কাটিয়ে ওঠার কৌশল

যদিও অত্যধিক ঘাম প্রতিরোধ করা সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে, তাই নিত্যদিনের জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এবং কৌশল অবলম্বন করলে তা এই সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারে,

১) পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা

নিয়মিত গোসল করা, ভালো মানের ডিওডোরেন্ট ব্যবহার, পরিষ্কার ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান ঘামের গন্ধকে কমিয়ে দিতে পারে।

২) উপযুক্ত পোশাক পরিধান করা

তুলা, লিনেন, সুতি বা প্রাকৃতিক তন্তু দিয়ে তৈরি ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নিন যাতে ভালোভাবে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং আর্দ্রতা শোষণ করতে পারে।

৩) স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করা

স্ট্রেস ও উদ্বেগ অত্যধিক ঘামের কারণ হতে পারে, তাই গভীর শ্বাসের ব্যায়াম, যোগব্যায়াম বা ধ্যানের মতো মন শিথিলকরণ কৌশলগুলি অনুশীলন করলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।

৪) অতিরিক্ত ঘাম উৎপাদনকারী কিছু বিষয় এড়িয়ে চলা

অতিরিক্ত ঘাম হয় এরকম সম্ভাব্য ট্রিগারগুলি সনাক্ত করুন এবং এড়িয়ে চলুন, যেমন মশলাদার খাবার, ক্যাফেইন, অ্যালকোহল এবং ধূমপান।

৫) হাইড্রেটেড থাকা

প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়া শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

নিজেকে হাইড্রেটেড রাখুন

৬) স্বাস্থ্যকর ওজন মেইনটেইন রাখা 

অনেক সময় স্থূলতা অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম এবং একটি সুষম ডায়েট মেনে চলার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখলে এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।

লাইফস্টাইল পরিবর্তন করেও যদি হাইপার হাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘাম থেকে মুক্তি না মেলে সে ক্ষেত্রে কোনো মেডিকেল কন্ডিশন বা রোগ আছে কি না তা খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আশা করছি অতিরিক্ত ঘাম নিয়ে যারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি হেল্পফুল হবে।

The post হাইপার হাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/d2xy5Gt
Apsara Hossain

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...