ভলিউম কমে যাওয়া চুলের সবচেয়ে কমন প্রবলেমগুলোর মধ্যে একটি। ফ্ল্যাট ও থিন হেয়ারে ভলিউম কীভাবে ফিরিয়ে আনবো, সেটি অনেকেই জানতে চান! এই সমস্যাটি হলে আমরা যেমন দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই, সেই সাথে আমাদের কনফিডেন্স লেভেলও কিন্তু লো হতে শুরু করে। ৫টি সিম্পল টিপস ফলো করে হেয়ার ভলিউম বাড়ানো যায় প্রাকৃতিকভাবে। নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে কী সেই টিপস।
অনেকেই প্রশ্ন করেন, “আচ্ছা, একবার চুলের ভলিউম কমে গেলে তা কি আর বাড়ানো যায়?” অবশ্যই যায়! ব্লো ড্রাই, ব্যাক কম্বিং এগুলো আপনাকে ইনস্ট্যান্ট সল্যুশন দিতে পারে। আজ আপনাদের জানাবো ন্যাচারালি হেয়ার ভলিউম বাড়ানোর সুপার ইফেক্টিভ টিপস, যেগুলো প্রোপারলি ফলো করলে আপনি নিজেই চুলে পার্থক্য লক্ষ্য করবেন অল্প কিছুদিনের মধ্যে।
হেয়ার ভলিউম কমে যাওয়ার কারণ
হেয়ার ভলিউম বলতে মূলত আমাদের চুলের ঘনত্ব বা ডেনসিটিকে বোঝানো হয়। চলুন শুরুতেই জেনে আসা যাক কেন আমাদের হেয়ার ভলিউম কমে যায়। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের বডিতে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। তখন হেয়ার গ্রোথ প্রসেস স্লো হয়ে যায় এবং একইসাথে আমাদের হেয়ার ফলিকলগুলোও সংকুচিত হতে থাকে। এতে চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার যেমন হ্রাস পায়, সেই সাথে হেয়ার ভলিউমও কমে যেতে শুরু করে।
তবে অনেক সময় অন্যান্য কারণেও বয়স বাড়ার আগেই চুল পাতলা হয়ে যায়। যেমন:
- চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, যেমন: ভিটামিন ডি, জিংক, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি না পেলে
- হরমোনাল ইমব্যালেন্স দেখা দিলে
- থাইরয়েড বা পিসিওএস (PCOS) এর সমস্যা থাকলে
- স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থাকলে
- চুলের ধরন বুঝে হেয়ার কেয়ার না করলে
৫টি সিম্পল টিপস ফলো করে হেয়ার ভলিউম বাড়ানো সম্ভব!
অনেকেই মনে করেন একবার হেয়ার ভলিউম বা বাউন্স কমে গেলে তা আর বাড়ানো সম্ভব নয়, যা শুধুই ভুল ধারণা। কয়েকটি ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সেগুলো নতুন চুল গজাতে এবং ভলিউম ফিরিয়ে আনতে খুবই ভালো কাজ করে। কী সেই ম্যাজিকাল সল্যুশন? চলুন জেনে নেই এখনই-
১) তিন ধরনের তেল মিক্স করে স্ক্যাল্প ম্যাসাজ
যদি নিয়মিত স্ক্যাল্পে অয়েল ম্যাসাজ করা হয়, তাহলে ব্লাড সার্কুলেশন ইম্প্রুভ হয়ে হেয়ার ফলিকলগুলো অ্যাকটিভ হয়ে যায়। এতে নতুন চুল গজানোর মাধ্যমে চুলের ভলিউম আগের থেকে বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে বেস্ট সল্যুশন হচ্ছে যদি শুধুমাত্র নারকেল তেল ব্যবহার না করে নারকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল ও আমন্ড অয়েল মিক্স করে ব্যবহার করা।
ভিটামিন ই ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ বলে নিউ হেয়ার গ্রোথের জন্য ক্যাস্টর অয়েল খুবই ইফেক্টিভ। আমন্ড অয়েল হেয়ার শ্যাফট স্মুথ রাখে, স্ক্যাল্পে নারিশমেন্ট প্রোভাইড করে, হেয়ারে বাউন্স ফিরিয়ে আনে। এই তিনটি তেল মিক্স করে যদি সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করেন, তাহলে আশা করা যায় দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই আপনারা পজেটিভ রেজাল্ট দেখতে পাবেন। চুল ঘন ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে প্রাকৃতিকভাবেই!
২) রিঠা দিয়ে হেয়ার ওয়াশ করা
আপনারা জেনে অবাক হবেন, আগেকার দিনে যখন শ্যাম্পু এতটা সহজলভ্য ছিলো না, তখনকার সময়ে নারীরা চুলে রিঠা দিয়ে তৈরি ন্যাচারাল শ্যাম্পু ব্যবহার করতেন। এতে আছে ন্যাচারাল ক্লেনজিং প্রোপার্টিজ। এই উপাদানটি স্ক্যাল্প স্টিমুলেশনে হেল্প করে, হেয়ার ফলিকলে পুষ্টি যোগায়, যার ফলে হেয়ার গ্রোথ প্রোমোট হয়।
রিঠা ব্যবহার করাও খুব সহজ। এক লিটার পানিতে ১৫ থেকে ১৬টি রিঠা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে ঐ পানির সাথে রিঠা ভালোমতো ম্যাশ করে একদম হালকা আঁচে পনেরো মিনিট জ্বাল দিন৷ তারপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানিটুকু আলাদা করে চুলে ব্যবহার করুন। আর দেখুন ম্যাজিক! ন্যাচারালি হেয়ার ভলিউম বাড়াতে এই প্রাকৃতিক উপাদানের কোনো তুলনা হয় না।
৩) রেগুলার রোজমেরি ওয়াটার স্প্রে করা
রোজমেরি যে শুধুমাত্র বিভিন্ন ইটালিয়ান ডিশ তৈরি করতেই কাজে আসে তা না, হেয়ার ভলিউম বাড়াতেও এই ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টের জুড়ি মেলা ভার। মার্কেটে ফ্রেশ ও ড্রাই দু’ ধরনের রোজমেরি লিভস পাওয়া যায়। যদি রোজমেরি লিভস না পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল আপনার জন্য আরেকটি গ্রেইট অপশন।
দুই কাপ পানিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রোজমেরি লিভস নিন এবং পনেরো থেকে বিশ মিনিট বয়েল করুন। তারপর আধা ঘন্টা অপেক্ষা করে মিশ্রণটি ছাঁকনি দিয়ে ভালোমতো ছেঁকে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে রোজমেরি ওয়াটার। অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ইউজ করতে চাইলে এ ধরনের কোনো ঝামেলা নেই। জাস্ট একটি স্প্রে বোতলে পানি ও ৫/৬ ফোঁটা রোজমেরি অ্যাসেনশিয়াল অয়েল ভালোভাবে শেইক করে নিন। প্রতিদিন দু’বার চুলে অ্যাপ্লাই করুন এই রোজমেরি ওয়াটার।
৪) এগ হেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করা
ডিম আমাদের চুলের জন্য কতটা উপকারি তা বলে শেষ করা যাবে না। এটি একটি রিচ প্রোটিন সোর্স হওয়ার কারণে বিভিন্ন হেয়ার প্রবলেমের সল্যুশন দেয় ম্যাজিকের মতো। সেই সাথে হেয়ার ভলিউম বাড়াতেও সাহায্য করে। এবার আসি কীভাবে এগ হেয়ার মাস্ক রেডি করে অ্যাপ্লাই করবেন সেই বিষয়ে।
দু’টি ডিমের কুসুম, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও দুই টেবিল চামচ পানি দিয়ে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। তারপর এই মাস্ক স্ক্যাল্প ও চুলে ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করুন। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন এই হেয়ার মাস্ক অ্যাপ্লাই করার চেষ্টা করুন। এটি ন্যাচারালি চুলের ভলিউম ফিরিয়ে আনবে এবং হেয়ার সিল্কি, সফট রাখবে।
৫) অ্যালোভেরা ও অনিয়ন একসাথে অ্যাপ্লাই করা
অ্যালোভেরা এমন একটি ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্ট যেটি আমাদের চুল পড়া কমাতে, চুল শাইনি ও সিল্কি করতে, একইসাথে হেয়ার ভলিউম বাড়াতে সাহায্য করে। ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেলের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু যাদের সরাসরি গাছ থেকে জেল কালেক্ট করা একটু ঝামেলার কাজ মনে হয়, তারা রেডিমেড অ্যালোভেরা জেল ইউজ করতে পারেন।
আপনার চুলের লেন্থ অনুযায়ী অ্যালোভেরা জেল ও সাথে পরিমাণমতো পেঁয়াজের রস মিশিয়ে নিন। স্ক্যাল্পসহ পুরো চুলে এই মিশ্রণটি লাগিয়ে এক ঘন্টা অপেক্ষা করুন এবং তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই ছোট্ট ট্রিক আপনার চুলকে ন্যাচারালি শাইনি, বাউন্সি করে তুলবে।
ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টের মাধ্যমে হেয়ার ভলিউম বাড়িয়ে তোলার শর্ত একটিই, সেটি হলো ধৈর্য ধরে কন্টিনিউ করা। আপনি যদি এক সপ্তাহ হেয়ার কেয়ার করে পরের সপ্তাহেই স্টপ করে দেন, তাহলে কখনোই এক্সপেকটেড রেজাল্ট পাবেন না। সেই সাথে হেয়ারে ভলিউম দিবে এমন শ্যাম্পু চুজ করুন। চুলের যত্নে সবসময় অথেনটিক হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস ইউজ করতে ভুলবেন না।
বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মেকআপ, স্কিন কেয়ার ও হেয়ার কেয়ার প্রোডাক্টস অ্যাভেইলেবল আছে সাজগোজের ফিজিক্যাল শপ, ওয়েবসাইট ও অ্যাপে। সাজগোজের ফিজিক্যাল শপের লোকেশনগুলো হলো যমুনা ফিউচার পার্ক, সীমান্ত সম্ভার, বেইলি রোডের ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার, ইস্টার্ন মল্লিকা, ওয়ারীর র্যাংকিন স্ট্রিট, বসুন্ধরা সিটি, উত্তরার পদ্মনগর (জমজম টাওয়ারের বিপরীতে), মিরপুরের কিংশুক টাওয়ার ও চট্টগ্রামের খুলশি টাউন সেন্টার। এছাড়াও অনলাইনে পারচেজ করতে চাইলে ভিজিট করুন শপ.সাজগোজ.কম এ।
ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক
The post ৫টি সিম্পল টিপস ফলো করে হেয়ার ভলিউম বাড়িয়ে নিন ন্যাচারালি! appeared first on Shajgoj.
from Shajgoj https://ift.tt/zquxJhM
Munia
Comments
Post a Comment