Skip to main content

শরীরের মেটাবলিজম বুস্ট করতে ডায়েটে কোন খাবারগুলো রাখবেন?

আমরা সবাই জানি, সুস্বাস্থ্যের জন্য হেলদি মেটাবলিজম খুবই প্রয়োজনীয়। মেটাবলিজম ঠিকঠাক থাকলে আমাদের শরীর দ্রুত কাজ করে। আমরা অনেকেই মনে করি ইচ্ছেমত না খেয়ে থাকলেই বা খুব এক্সারসাইজ করলেই বডি ফ্যাট তরতর করে কমে যাবে। কিন্তু ভুল ডায়েটের ফলে ফ্যাট বার্ন খুব একটা হয় না এবং হতাশার জন্ম নেয়। যাই হোক,  যাদের মেটাবলিজম খুব স্লো কাজ করে এবং ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ ঠিকঠাক করেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলে এমন কিছু খাবারের কথা বলবো যেগুলো আপনার ডায়েটে অ্যাড করলে মেটাবলিজম বুস্ট হবে, এক্সট্রা বডি ফ্যাট বার্ন করতে হেল্প করবে এবং শরীরকে ফাস্ট কাজ করার শক্তি যোগাবে। এই খাবারগুলো খেলে দেহের শক্তি খরচের হার বেড়ে যাবে। শরীরের এক্সট্রা শক্তি খরচ হলে সঞ্চিত ফ্যাট নিজে থেকেই বার্ন হবে। চলুন দেখে নেয়া যাক, শরীরের মেটাবলিজম বুস্ট করতে কোন খাবারগুলো কর্যকরী।

শরীরের মেটাবলিজম বুস্ট করতে যে খাবারগুলো খাবেন

১) প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার 

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিন খেলে দেহের মেটাবলিক রেট বেড়ে যায় এবং ক্যালরি খুব দ্রুত বার্ন হয়। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, ডেইরি প্রোডাক্টস, ডিম, বাদাম ইত্যাদি। এগুলো ডাইজেস্ট হতে সময় বেশি নেয় তাই এগুলো ডাইজেস্ট করার জন্য শরীর বেশি শক্তি খরচ করে এবং ফ্যাট বার্ন হয়। যেমন- ডিমের কথাই ধরা যাক। প্রতিটি বড় ও সিদ্ধ ডিমে প্রায় ৬.২৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে। তাই যারা ডায়েট করছেন তাদের মেটাবলিজম বুস্ট করতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম রাখতে পারেন।

শরীরের মেটাবলিজম বুস্ট করতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

২) মিনারেলস সমৃদ্ধ খাবার

শরীরে মিনারেলস, আয়রন, সেলেনিয়াম প্রতিটির কার্যকারিতা ভিন্ন কিন্তু এই সবগুলোই শরীরের মেটাবলিজম বুস্ট করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সেলেনিয়াম থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, এটি এমন একটি গ্রন্থি যা বিপাকীয় ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন তৈরি করে। আপনার থাইরয়েডের কার্যকারিতাকে সর্বোচ্চ বাড়াতে এবং মেটাবলিজম রেট ঠিক রাখতে প্রতিদিনের ডায়েট মেন্যুতে সেলেনিয়াম এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাংস, সি ফুড, লেবু, বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার অ্যাড করুন।

৩) মসুর ডাল

ডায়েটে প্রতিদিন অল্প হলেও মসুর ডাল রাখতে পারেন কারণ এটিও প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাবার এবং এটি মেটাবলিজম বাড়াতে খুব কার্যকরী। এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, তাই বারবার খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এতে প্রচুর ফাইবার থাকায় অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে তোলে, তাই বিপাক ক্রিয়া ভালো হয়।

৪) কাঁচা মরিচ

মসলাদার খাবারগুলোর মধ্যে মেটাবলিজম বাড়াতে পারে এমন একটি খাবার হলো কাঁচা মরিচ। মরিচ ওজন কমানোর জন্য দুর্দান্ত, কারণ এতে রয়েছে থার্মোজেনেসিস যা ফ্যাট বার্ন করার জন্য দেহে তাপ তৈরি করে। এতে আরো রয়েছে ওজন কমানোর প্রধান উপাদান ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, ক্যাপসাইসিন যা চর্বিযুক্ত টিস্যুগুলোর এনার্জি  ক্ষয় বাড়ায় এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

শরীরের মেটাবলিজম বুস্ট করতে কাঁচা মরিচ

৫) ব্রকলি

ডায়েটে ব্রকলি থাকবে না এটা হতেই পারে না! কারণ এটি খেতে যেমনই হোক না কেন ব্রকলির অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। যেমন- ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, প্রোটিন এবং অসংখ্য ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট যা বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার এবং বিপাকীয় সিনড্রোমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ব্রকলি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং অস্বাভাবিক বিপাককে উন্নত করতে সাহায্য করে।

৬) মেথি

মেথিতে এমন একটি জাদুকরী উপাদান থাকে যা মেটাবলিজম বুস্ট করে ফ্যাট দ্রুত বার্ন করতে পারে। মেথি শরীরের অ্যাডিপোজ টিস্যু (বডি ফ্যাট) কমিয়ে আনে এবং পাচক এনজাইম (এই এনজাইম খাদ্যকে ছোট ছোট উপাদানে বিভক্ত করতে সাহায্য করে, যা আমাদের শরীর শোষণ করতে পারে), অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বৃদ্ধি করে মেটাবলিজমকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

৭) পানি

হাইড্রেটেড থাকা সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। এজন্য প্রতিদিন ৩ লিটার পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে পানি পানের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান কোলন থেকে টক্সিন বের করে দিতে, অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করবে।

স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পানি পান করতে হবে

৮) দারুচিনি

দারুচিনি কেবল খাবারের টেস্টই বাড়ায় না। এই মসলাটি একটি প্রাকৃতিক ওজন কমানোর এজেন্ট, যা মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে তোলার কাজ করে। গবেষণায় দেখা যায় যে, দারুচিনি ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়াতে সাহায্য করে, রক্তচাপ কমায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়।

৯) আপেল

আপেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,  ফাইবার এবং ফ্ল্যাভোনয়েড সমৃদ্ধ যা প্রদাহ কমাতে, মেটাবলিজম রেট  উন্নত করতে, খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং লিপিড আই প্রোফাইল এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই স্বাভাবিকভাবে ওজন কমাতে দিনে একটি আপেল খান।

১০) কফি

কফি মেটাবলিজম বুস্ট করার জন্য একটি দুর্দান্ত পানীয়। এই ডার্ক, অ্যারোমেটিক এবং মুড ঠিকঠাক রাখার ড্রিংকসটি আপনাকে যেমন মুহূর্তেই চাঙ্গা করে তুলতে পারে, তেমনই শরীরের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে ফ্যাট বার্ন করতেও হেল্প করে। প্রতিদিন দুই কাপ ব্ল্যাক কফি পান করুন। কিন্তু ক্যাফেইন সহ্য করতে না পারলে এড়িয়ে চলাই ভালো।

কফি

মেটাবলিজম বাড়াতে আপনার যা যা করা উচিত 

  • সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে এক গ্লাস পানি পান করুন
  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন
  • স্ট্রেস কম নিন
  • প্রতি ২-৩ ঘন্টা পর পর খাবার খান
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন
  • ফাস্ট ফুডকে না বলুন
  • কমপক্ষে ৭ ঘন্টা ঘুমান
  • গভীর রাতে ডিনার করবেন না

একটি হেলদি এবং ফিট জীবনযাপন করতে চাইলে দৈনিক ডায়েট এর তালিকায় সুষম খাদ্য গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। উপরে বর্ণিত খাবারগুলো দেহের মেটাবলিজম রেট বাড়িয়ে তুলতে এবং এক্সট্রা ফ্যাট বার্ন করতে হেল্প করে। সেই সাথে পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

The post শরীরের মেটাবলিজম বুস্ট করতে ডায়েটে কোন খাবারগুলো রাখবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/iYpJAdV
Arfatun Nabila

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...