Skip to main content

প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণে মা ও শিশুর কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?

হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ, একটি সাধারণ মেডিকেল কন্ডিশন যাতে বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সেই উচ্চ রক্তচাপ যখন গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়, তখন এটি বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণে কখনো কখনো জটিল অবস্থা তৈরি হতে পারে। তাই গর্ভবতী মা ও গর্ভস্থ শিশু উভয়ের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। চলুন একটু ডিটেইলসে জেনে নেই তাহলে।

উচ্চ রক্তচাপের প্রকারভেদ

১) গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ

প্রেগনেন্সির আগে যাদের স্বাভাবিক রক্তচাপ ছিলো, তাদের যদি গর্ভাবস্থায় ২০ সপ্তাহের পর উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয় তখন তাকে গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ বলে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত ১৪০/৯০ মিমি পারদ চাপ এর সমান বা তার বেশি হলেই তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে নির্ণয় করা হয়। কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হলে এটি সাধারণত সন্তান জন্মদানের পর পরই ঠিক হয়ে যায়।

প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণ

২) দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ রক্তচাপ

দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপ গর্ভাবস্থার আগে থেকেই থাকতে পারে বা গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের আগে নির্ণয় করা যেতে পারে। এটি গর্ভাবস্থার পরেও চলতে পারে এবং ঝুঁকি কমাতে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে। উচ্চ রক্তচাপের সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না, তাই এটি ঠিক কখন থেকে শুরু হয় তা জানা মুশকিল।

৩) প্রি-এক্লাম্পসিয়া

গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের পর যদি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়মিত দেখা দেয় এবং নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে সেটি প্রি-এক্লাম্পসিয়ায় রূপ নিতে পারে। এটি একটি মারাত্মক গর্ভকালীন জটিলতা। প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ফলে কিডনি, ব্রেইন, লিভারে ক্ষতি হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তা মা ও শিশুর জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ দেখা দেয়। মায়ের খিঁচুনি শুরু হতে পারে, আরও অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?

প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণে মা ও শিশুর কী ধরনের জটিলতা হতে পারে, চলুন জেনে নেই-

১) গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি কমে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপের ফলে প্লাসেন্টায় রক্ত প্রবাহ সীমিত হয়ে যায়, যার ফলে ভ্রূণের বৃদ্ধি ও বিকাশে ঘাটতি দেখা দেয়।

২) প্রিম্যাচিউর বেবি ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অনেক সময় ইমার্জেন্সি সিচুয়েশনে সময়ের আগেই সিজার করাতে হয়। উচ্চ রক্তচাপ গর্ভাবস্থার ৩৭ সপ্তাহের আগে প্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়, যা নবজাতকের জন্য বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রিম্যাচিউর বেবি ডেলিভারি

৩) রক্তচাপ অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেলে Placental abruption হতে পারে বা প্লাসেন্টা জরায়ুর প্রাচীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। এর ফলে ব্লিডিং শুরু হয় এবং শিশুর দেহে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। যার ফলে মা ও শিশুর জীবনের ঝুঁকি থাকে।

৪) বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ক্ষতি সাধন হয়। প্রি-এক্লাম্পসিয়ার ফলে লিভার, কিডনি, ব্রেইন এর মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, আগেই বলেছি। এতে মায়ের জীবনের ঝুঁকিও থাকে।

প্রি-এক্লাম্পসিয়ার লক্ষণ

উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও প্রি-এক্লাম্পসিয়ার অন্যান্য লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে-

  • প্রস্রাবে অতিরিক্ত প্রোটিন বা কিডনির সমস্যা
  • তীব্র মাথাব্যথা
  • দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন, চোখে ঝাপসা দেখা, দৃষ্টি বা আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা
  • আকস্মিক ওজন বৃদ্ধি ও ফুলে যাওয়া – বিশেষ করে মুখ, পা ও হাতে পানি আসা
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
  • ফুসফুসে তরল জমে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া

প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপ

প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হলে করণীয় কী?

১) গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নজরদারি, নিয়মিত চিকিৎসকের ফলোআপে থাকা এবং লাইফস্টাইলে পজেটিভ চেঞ্জ আনা খুব জরুরি। রক্তচাপের ওঠানামা মনিটর করা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি শনাক্তকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত রক্তচাপ মনিটর করে যদি কোনো পরিবর্তন শনাক্ত করা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২) প্রেগনেন্সিতে অতিরিক্ত লবণ, চিপস, প্রসেসড ফুড এগুলো এড়িয়ে চলুন। উচ্চমাত্রায় লবণযুক্ত পানীয়- বোরহানী, জিরা পানি, ঘোল, লাবাং বা মাঠা এগুলোও এড়িয়ে চলা উচিত। ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটি একদম বাদ দিতে হবে।

৩) আল্ট্রাসাউন্ডে ভ্রূণের নড়াচড়া পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুর বৃদ্ধি ও সুস্থতার নিরীক্ষণ করতে হবে, যাতে যেকোনো জটিলতা সময়মতো শনাক্ত করা যায় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

উচ্চ রক্তচাপ

৪) কিছু ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য চিকিৎসক কিছু নির্দিষ্ট মেডিসিন প্রেসক্রাইব করে থাকেন, যা সাবধানতার সাথে ও নিয়ম মেনে সেবন করতে হয়। যারা কনসিভ করার আগের থেকেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ গ্রহণ করেন, তারা অবশ্যই গাইনোকলিস্টের সাথে পরামর্শ করে নিন কেননা এই সময়ে মেডিসিন ও ডোজে কিছু চেঞ্জ আসতে পারে।

স্ট্রেস ফ্রি থাকুন

এই সময়ে অতিরিক্ত টেনশন একদমই করা যাবে না। ব্যালেন্সড ডায়েট, নিয়মিত ব্যায়াম, স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এর মাধ্যমে একটি হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করুন; যা রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত যোগাসন বা হালকা ব্যায়াম করতে পারেন।

প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণে মা ও গর্ভের শিশুর জন্য যেন কোনো জটিল পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন আগের থেকেই। এই সময় মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে নিয়মিত চেকআপ করানো ও সব পরামর্শ মেনে চলা গর্ভবতী মা ও তার পরিবারের অন্যতম দায়িত্ব। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকুন।

 

ছবি- সাটারস্টক

The post প্রেগনেন্সিতে উচ্চ রক্তচাপের কারণে মা ও শিশুর কী ধরনের জটিলতা হতে পারে? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/d9ZXRsP
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...