Skip to main content

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং | ঘড়ি ধরে ওজন কমানোর সহজ উপায়

বাঙালি হিসেবে জন্ম থেকেই আমরা ভোজনরসিক! একটা ছুটির দিন বা একটা উৎসব পেলেই হলো, হাজারটা আইটেমের লিস্ট তৈরি হয়ে যায় মাথায়। কিন্তু শুধু পেট আর মন ভরলে আর কি হবে, ওদিকে পকেট তো ফাঁকা হয়ে যায়! এই রোগ ঐ রোগের জন্য ওষুধ কিনতে কিনতে অবস্থা হয়ে যায় আরো ভঙ্গুর! এর থেকে বাঁচার আর প্রিয় শরীরটাকে বাড়তি ওজন নামের দানবটার থেকে বাঁচানোর তাহলে উপায় কী? খুব সোজা, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং! ঘড়ি ধরে ওজন কমানোর সহজ এই উপায়টি সম্পর্কেই জানাবো আজ।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কী? 

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং, তবে তার আগে চলুন কিছু ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্টস জেনে নেই এই সম্পর্কে। ২০১৯ সালে ইন্টারনেটে সবচেয়ে বেশি খোঁজা শব্দগুলোর মধ্যে বেশ উপরের দিকেই জায়গা করে নিয়েছিলো এই শব্দটি। কী পরিমাণ সাড়া পড়েছিল তাহলে বুঝতেই পারছেন! তবে ২০১৯ সালের আরো আগে থেকেই এই নিয়ে কথা চলছিলো। ইংল্যান্ডের জার্নাল অব মেডিসিন এ নিয়ে একটা গবেষণাপত্রই বানিয়ে ফেললো শুধু একটা ডায়েট স্টাইলের উপর ভিত্তি করে। এছাড়াও ২০১২ সালে বিবিসি-তে একটি প্রোগ্রাম হতো, যার নাম ছিলো ‘Eat Fast, Live Longer’। বুঝতেই পারছেন জ্ঞানীগুণী মহলে এই বস্তুর ভক্তের অভাব নেই।

এই ফাস্টিং আসলে কীভাবে করে? ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং হলো সবিরাম উপোস। এটি এমন একটি খাদ্যাভ্যাস যেখানে আপনি কী খাচ্ছেন, কতটুকু খাচ্ছেন সেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং আপনি কোন সময়ে খাচ্ছেন আর কোন সময়ে খাচ্ছেন না সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটো ইন্টারমিটেন্ট পদ্ধতি হলো ১৬ঃ৮ আর ৫ঃ২।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং

১৬ঃ৮ মানে হলো আপনি দিনের মধ্যে যেকোনো সময়, আপনার সুবিধা অনুযায়ী, ৮ ঘন্টা খাবেন আর বাকি ১৬ ঘন্টা কোনো রকম ক্যালরি গ্রহণ করতে পারবেন না। অনেকটাই আমাদের মুসলমানদের রোজা রাখার মতো। তবে ভয় নেই, আপনাকে একেবারে না খেয়ে থাকতে কেউ বলবে না, বরং চাইলে আপনি একেবারে লো ক্যালরি যুক্ত কিছু যেমন- ফলের ফ্লেভারযুক্ত পানি, শসা বা কম ক্যালরির যেকোনো ফল একেবারে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। ৫ঃ২ হলো সপ্তাহে ৫ দিন স্বাভাবিক জীবনযাপন করা এবং দুইদিন উপবাস থাকা। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার ক্যালরি ইনটেক যেন কোনোভাবেই আপনার ওজন কমানোর অন্তরায় না হয়ে যায়!

ওজন কমাতে কি আসলেই এটা কাজে দিবে?

মোটামুটি আমরা বুঝলাম যে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর ব্যাপারটা আসলে কী, এবার চলুন আরেকটু কাঁটাছেড়া করি পুরো জিনিসটাকে। জেনে নেই ঠিক কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় আপনি ওজন কমাতে পারেন।

আমরা যেসব খাবার খাই, কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিন বা ফ্যাট যাই হোক, সেগুলোকে বডি দুইভাবে ভেঙে ফেলে। একভাগে থাকে গ্লুকোজ, এই গ্লুকোজ আমাদের দেহের সব কোষের মধ্যে যায় এবং অক্সিডেশনের মাধ্যমে সেখানে শক্তি দেয়। বলাবাহুল্য, সেই শক্তি দিয়েই আমরা কাজ করি। এখন ধরে নিন, আপনি খাবার বেশি খেয়েছেন বা যে পরিমাণ কাজ করলে আপনার প্রতিদিনের এনার্জি বার্ন হবে সেই পরিমাণে আপনি কাজ করেননি। তাহলে কী হবে? খুব স্বাভাবিকভাবেই শরীরে শক্তি জমা থাকবে। এখানে আসছে আমাদের দ্বিতীয় ভাগ, আমাদের শরীরে যত বাড়তি শক্তি আছে বা গ্লুকোজ আছে সেগুলোকে ফ্যাট আমাকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মাংসপেশির নিচে জমিয়ে রাখে। আর আমরা মোটা হয়ে যাই এভাবেই!

ওজন বৃদ্ধি

এবার ভাবুন তো, যখন আমরা রমজান মাসে রোজা থাকি বা সারাদিনের একটা লম্বা সময় না খেয়ে থাকি তখন কই থেকে আসে আমাদের কাজ করার শক্তি? আর শুধু তো কাজ করার শক্তি নয়, বরং আমাদের হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, ব্রেইন এসব ইন্টার্নাল অর্গানগুলোর নিজেদের কাজ চালিয়ে নিতেও তো শক্তি লাগে, তাই না? সেগুলো আসে কই থেকে? আমাদের শরীরে জমে থাকা ফ্যাট তখন প্রয়োজন অনুযায়ী গ্লুকোজে ভেঙে যায় এবং শক্তির জোগান দেয়। এভাবেই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং আমাদেরকে শক্তি দেয় এবং শরীরের জমানো ফ্যাটগুলোকে ভেঙে শরীরকে আরেকটু হালকা বানায়।

এই ফাস্টিং এর সুবিধা কী? 

কিছুটা আদ্যোপান্ত তো জানা হলো ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে, এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক এটি কি শুধু ওজনই কমায় নাকি আরো কিছু উপকারও দেয় সে সম্পর্কে। এই ফাস্টিং এর সুবিধা-

  • আমাদের রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
  • শরীরে ইনসুলিন প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়, যার জন্য শরীরের অতিরিক্ত শর্করা ভেঙে যায়
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
  • স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণ কমিয়ে দেয়
  • হরমোন ব্যালেন্সিং এর ক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করে
  • স্কিনের গ্লো বাড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও এর কিছুটা প্রভাব আছে বলে ধারণা করা হয়

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর সুবিধা

কাদের জন্য এই ফাস্টিং নয়? 

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর প্রচুর উপকারী দিক থাকলেও এটা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। কারা এই ফাস্টিং করতে পারবেন না চলুন জেনে আসি।

  • যারা অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার চেষ্টা করছেন
  • গর্ভবতী নারী
  • স্তন্যদাত্রী
  • ডায়াবেটিস রোগী
  • নিম্ন ওজন আছে এরকম মানুষ
  • নিম্ন রক্তচাপ আছে এমন কেউ

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর সময়ে আপনার শরীর যেন কোনোভাবেই পানিশূন্যতায় না ভোগে এটা খেয়াল রাখা কিন্তু অবশ্য কর্তব্য! আর খাবার তালিকায় এই সময়টায় প্রসেসড ফুড আর বেশি ভাজাপোড়া জিনিস না রাখাই ভালো। এত সাধ করে যে ওজন কমানোর মিশনে নেমেছেন খেয়াল রাখবেন যেন নিজের ছোট ছোট ভুলের জন্য এই মিশনটা ব্যর্থ না হয়! আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি কয়েকজন মিলে একসাথে এই মিশনে নামেন। আজকাল অনেকগুলো ফেইসবুক গ্রুপে এই ধরনের কার্যক্রম চলমান, আগ্রহী হয়ে একটু সার্চ করে যুক্ত হয়ে যেতে পারেন! সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।

 

ছবিঃ সাটারস্টক

The post ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং | ঘড়ি ধরে ওজন কমানোর সহজ উপায় appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/8GxMQap
Arfatun Nabila

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

Uttara Lake View Specialized Hospital

Uttara Lake View Specialized Hospital Address: Address: House#34, Road# 5A/10B, Sector#11, Uttara, Dhaka, 1230 Phone:  01813-904080 Available Services: 24 hours emergency service Self-contained ICU NICU HDU Cabin General Ward Corona Unit Chamber of Specialist Doctors. Also, all units are open including any complex operation. from Specialist Doctor List https://ift.tt/GFQ56KdRb via IFTTT