Skip to main content

চাইল্ড ওবেসিটি | শিশুর ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে করণীয় কী?

সুখী ও সুন্দর জীবনের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন শারীরিক সুস্থতা। সুস্থ থাকতে দরকার স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রা ও পরিমিত ওজন। যারা হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করেন না, খাবারের ক্ষেত্রে অনিয়ম করেন এবং শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলেন, খুব সহজেই তাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি জমে যায়। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির এই সমস্যাকে বলা হয় ওবেসিটি। বডি মাস ইনডেক্স বা বিএমআই অনুযায়ী দেহের উচ্চতার বিবেচনায় ওজন বেড়ে গেলে তখনই তা চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়ে থাকে! আজকের টপিক চাইল্ড ওবেসিটি নিয়ে। কেন বাচ্চাদের ওয়েট বেড়ে যায় এবং কীভাবে সেটা কন্ট্রোল করা যায়, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আজকের আলোচনা।

যেসব কারণে ওজন বাড়ে

শিশুদের অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি বা মুটিয়ে যাওয়ার কারণ কী, চলুন প্রথমেই সেগুলো জেনে নেওয়া যাক-

  • জেনেটিক্যাল ইস্যু
  • হরমোনের অসামঞ্জস্যতা
  • পারিপার্শ্বিক পরিবেশ
  • সারাদিন শুয়ে বসে থাকা
  • অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা
  • বাইরে খেলাধুলা না করা
  • অতিরিক্ত কোমল পানীয় পান এবং চকোলেট, ডোনাট, চিপস, বার্গার ইত্যাদি ফাস্টফুড নিয়মিত খাওয়া

ডোনাট

মানসিক চাপের কারণেও শিশুর ওজন বাড়তে পারে। একঘেয়েমি জীবনযাত্রার কারণে বা কোনো বিনোদন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক বাচ্চারাই ঘরে বসে অতিরিক্ত খাবার খায়। কিন্তু শারীরিক পরিশ্রম না হওয়ার কারণে সেই ফ্যাট বার্ন হয় না। তাই ওজন বেড়ে যায়। স্টেরয়েড জাতীয় মেডিসিন দীর্ঘদিন যাবত সেবনেও ওজন বাড়তে পারে।

কম খেলেও বাড়ছে ওজন?

পরিমাণে কম খেলেও ওজন বাড়তে দেখা যায় অনেক বাচ্চার। এ ক্ষেত্রে ধীরে খাবার হজম হওয়াকে দায়ী করা যেতে পারে। দেখা যায় অনেক বাচ্চারা একই স্থানে বসে দীর্ঘ সময় টেলিভিশন দেখে, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়। ছোটাছুটি না করলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে আইসক্রিম, মিল্ক চকোলেট, বার্গার, তেলে ভাজা খাবার ইত্যাদি ফাস্টফুড রেগুলার খেয়ে অভ্যস্ত। এসব খাবারে উচ্চমাত্রায় ক্যালরি থাকে। তাই এসব খাবার অল্প খেলেও শরীরে অধিক মাত্রায় ক্যালরি জমা হয়। ফলে পরিমাণে কম খেলেও ওজন বেড়ে যায়।

চাইল্ড ওবেসিটি কি জটিল কোনো সমস্যা?

চাইল্ড ওবেসিটি থাকলে সাধারণত কিছু জটিলতা দেখা দেয়-

  • টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
  • রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়
  • উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা দেখা দেয়
  • কোমর ও জয়েন্টে জয়েন্টে পেইন হয়
  • ঘুমের মধ্যে নাকডাকার সমস্যা ও শ্বাসকষ্ট হয়
  • পিত্তথলিতে পাথর বা ইনফেকশন হয়
  • শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দেখা দেয়
  • ঘাড় ও ত্বকের ভাঁজে ভাঁজে কালো দাগ দেখা দেয়
  • চর্বি জমে লিভারের স্থায়ী সমস্যা হতে পারে

চাইল্ড ওবেসিটি

এছাড়াও অল্প বয়সেই ছেলে শিশুদের দাঁড়ি গোফ ওঠা বা মেয়েদের মাসিক শুরু হয়ে যাওয়া এবং অবাঞ্চিত লোম গজানোর মতো বিব্রতকর সমস্যা হতে পারে। তাহলে আপনি এখন নিজেই বুঝতে পারছেন যে চাইল্ড ওবেসিটি গুরুত্বর সমস্যা কিনা!

চাইল্ড ওবেসিটি প্রতিরোধে মা-বাবার করণীয় 

১) শিশুর ওজন বৃদ্ধি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে একটি ওয়েট চার্ট রাখতে হবে। বয়স অনুযায়ী বাচ্চার ওয়েট কেমন হওয়া উচিত, সেটা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।

২) স্কুল যদি বাসার কাছে হয়, তাহলে গাড়ি বা রিকশা ব্যবহার না করে শিশুকে হেঁটে যাতায়াতের অভ্যাস করুন।

৩) কৌটার দুধ বা শুধুমাত্র প্যাকেটজাত খাবার খাওয়ালে অল্প বয়সেই শিশু ওবেসিটিতে ভুগতে পারে। তাই শিশুকে ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ান। ছয় মাস পূর্ণ হলে ঘরে বানানো পুষ্টিকর খাবার ও ফলমূল পরিমিত পরিমাণে দিতে হবে। বাড়ন্ত শিশুকে ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, চকোলেট, আইসক্রিম, সসেজ, ফ্রোজেন স্ন্যাকস প্রভৃতি বাইরের খাবার যতটা সম্ভব কম দিতে হবে।

আনহেলদি ফুড

৪) শিশুকে নিজের কাজ নিজে করতে উৎসাহিত করতে হবে এবং বাইরে খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। সারাদিন যেন টিভির সামনে বসে না থাকে বা ডিভাইসে আসক্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

৫) লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ির ব্যবহার, প্রতিদিন বাইরে খোলামেলা পরিবেশে খেলাধুলা করা, বাড়ির কাজে শিশুর অংশগ্রহণ ইত্যাদি শিশুকে ফিট থাকতে সাহায্য করবে।

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন 

শিশু বেশি মুটিয়ে যাচ্ছে বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, এমনটা সন্দেহ হলে অবশ্যই শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি উচ্চতা ও ওজন মেপে এবং প্রয়োজনে অন্যান্য টেস্ট করে বলতে পারবেন যে আপনার শিশু আসলেই ওবেসিটির দিকে যাচ্ছে কিনা। কোনো হরমোনাল প্রবলেম থাকলে সেটাও বোঝা যাবে। তাই চাইল্ড ওবেসিটি থাকলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন। ফাস্টফুড পরিহার করে ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন এবং শিশুকেও এই ব্যাপারে উৎসাহিত করুন। সুষম খাবার গ্রহণ ও শরীরচর্চার মাধ্যমেও ওজন নিয়ন্ত্রণে না এলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না! আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকবেন।

ছবি- সাটারস্টক

The post চাইল্ড ওবেসিটি | শিশুর ওজন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে করণীয় কী? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/M2h65Fu
Munia

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...