Skip to main content

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে কী ধরনের এক্সারসাইজ করবেন?

ডিমেনশিয়া আমাদের অনেকের কাছেই বেশ পরিচিত একটি শব্দ। এই রোগে মানুষ প্রতিদিনের কাজগুলো করতে ভুলে যান, অনেকে বারবার একই প্রশ্ন করতে থাকেন, খাবার বা ওষুধ খেয়েও ভুলে যান খেয়েছেন কিনা। আমাদের আশেপাশে এমন অনেকেই আছেন যারা ডিমেনশিয়া রোগে ভুগছেন। চলুন ডিমেনশিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে দুটো কেইস স্টাডি দেখি-

কেইস স্টাডি ১ঃ

ব্যাংকে লাইনে দাঁড়িয়ে শুনতে পেলাম সিকিউরিটি গার্ড জোরে জোরে বলছে, ‘কে এখানে টাকার বান্ডিল ফেলে গেছেন?’ ব্যাপারটা আমার মনে তেমন দাগ না কাটলেও ক্যাশিয়ার চমকে উঠে বললেন, ‘আহারে, কে জানি টাকা ফেলে গেলেন!’ পাশে দাঁড়ানো স্কুল শিক্ষিকা আন্টি বললেন, ‘নিশ্চয়ই ডিমেনশিয়া’। আমিও ভেবে দেখলাম, হ্যা, এই ধরনের রোগীদের খুব অল্প সময়ের স্মৃতি চলে যেতে পারে। তারা কী কাজ করছিলেন ভুলে যান।

কেইস স্টাডি ২ঃ

আজ ব্যাংকে বেজায় ভীড়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আমি ক্লান্ত। হাতে আরো কাজ আছে। তবু দরজার কাছে এসে সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত টাকা?’ জানালো, ‘তেত্রিশ হাজার’। এবার আমার মনে ভেসে উঠলো এক মায়াময় নারীর মুখ। কাঁধ পর্যন্ত চুল। লাইনে আমার সামনেই তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। তাকে তেত্রিশ হাজার টাকার একটা বান্ডিল, আর খুচরো আটশ ষোল টাকা দিয়ে ক্যাশিয়ার বলেছিলেন, ‘টাকাগুলো গুণে নিন’। ভীড় বেশি বলে তিনি লাইন থেকে সরে টাকা গুণছিলেন। নিশ্চয়ই আটশ ষোল টাকা ব্যাগে নিয়ে তিনি বান্ডিলটা ফেলে গেছেন। আমি কাউন্টারে ব্যাপারটা জানালাম। তারা ব্যবস্থা নিবে বললো। জানি না প্রবীণ সেই আন্টি তার টাকা ফেরত পেয়েছেন কিনা। যদি তার মনে না পড়ে টাকাটা তিনি ব্যাংকে ফেলে গেছেন, কোথায় কোথায় না খুঁজছেন। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। বারবার মনে হচ্ছিল, তিনি বা তার পরিবার কেউ হয়তো তার রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন।

ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তি

এই আন্টির মতো আমার বা আপনার পরিবারেও অনেক সময় প্রবীণ মানুষটি বলতে পারেন, তার কিছু মনে থাকে না। খুব স্বল্প সময়ে মনে করা একটা কথা তিনি ভুলে যান, আবার মনে পড়ে। মনে রাখবেন, এটা একটা রোগের লক্ষণ। রোগটির নাম ডিমেনশিয়া। এই রোগটি কেন হয়, লক্ষণ এবং এর প্রতিরোধে কী কী এক্সারসাইজ করা যায়, চলুন জেনে নেই ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট এর কাছ থেকে।

ডিমেনশিয়া কী?

ডিমেনশিয়া মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ যার ফলে রোগী কিছু মনে রাখতে পারে না। এমনকি এ রোগটির কারণে একটু আগেই করা কাজ ভুলে যায় অনেকে। সাধারণত ৬০ বছর বয়সী নারী ও পুরুষেরা এ রোগে আক্রান্ত হন।

ডিমেনশিয়া রোগের লক্ষণগুলো কী কী?

  • শর্ট টার্ম মেমোরি লস
  • পার্স/মানিব্যাগ কোথায় রেখেছে ভুলে যাওয়া
  • বিল দিতে ভুলে যাওয়া
  • কী রান্না করবে প্ল্যান করতে গিয়ে বারবার ভুল করা
  • কারো সাথে দেখা করার বা কোনো কাজের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এর কথা ভুলে যাওয়া
  • নাস্তা বা ওষুধ খাওয়ার পর ভুলে যাওয়া
  • ব্যক্তিত্বের আকস্মিক পরিবর্তন, অতিরিক্ত অস্থিরতা, ঘুম না হওয়া, হঠাৎ রেগে যাওয়া ইত্যাদি

সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিরা এ রোগে বেশি ভোগেন। রোগটি বয়সজনিত স্বাভাবিক পরিবর্তন হলেও মূলত এসব লক্ষণ দিয়েই ডিমেনশিয়ার শুরু হয়, দিনে দিনে অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

ভুলে যাওয়া রোগ- ডিমেনশিয়া

কারণ

ডিমেনশিয়া হওয়ার কারণ হিসেবে ব্রেনের কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে উল্লেখ করা হয়। এ সমস্যা হলে ব্রেনের কোষগুলো একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। তখন মানুষ স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারে না, তার আচরণ ও অনুভূতিতে পরিবর্তন আসে।

সাধারণত বিজ্ঞানীরা ডিমেনশিয়ার কারণ হিসেবে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করেন-

  • ডিপ্রেশন
  • মেডিসিনের সাইড ইফেক্ট
  • অতিরিক্ত মদ্যপান
  • থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা
  • ভিটামিনের ঘাটতি

ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে নানা ধরনের ব্যায়াম

ব্যায়ামের ধরন

অনেকেই হয়তো জানেন না, এক্সারসাইজ ভুলে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে তিন দিন ২০ থেকে ৪০ মিনিটের ব্যায়ামের মাধ্যমে ৬ সপ্তাহে ভুলে যাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়। এক্সারসাইজ করলে ব্রেইনে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, ফলে ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। স্ট্রেস কমানো কিংবা মন খারাপ কমানোর জন্য এক্সারসাইজের কোনো বিকল্প নেই।

নিয়মিত দৌড়ানো, জগিং, সাইক্লিং, সুইমিং, কার্ডিও, মাসল স্ট্রেংথ বাড়ানো, অ্যারোবিক্স, স্ট্রেচিং- যে কোনো ধরনের এক্সারসাইজ করলে ডিমেনশিয়ার প্রকোপ কমে আসে। এছাড়াও নিয়ম করে এক্সারসাইজের চমকপ্রদ ফলাফল হচ্ছে, এতে মনের বিষণ্ণতাও দূর হয়ে যায়। সেই সাথে ভালো ঘুম হয়। ফলে এক এক্সারসাইজে শারীরিক ও মানসিক ফিটনেস পাওয়া যায়। অনেকের পক্ষেই কার্ডিও এক্সারসাইজ করা সম্ভব নয়। তারা নিয়মিত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এছাড়া যে কোনো ধরনের নাচ, বক্সিং, রিপিটেড স্টেপ অর্থাৎ একই স্টেপ বারবার করার মতো ব্যায়ামগুলো মনকে একাগ্র হতে সাহায্য করে।

বয়স্ক ব্যক্তির ব্যায়াম

এই ধরনের এক্সারসাইজগুলো ডিমেনশিয়া রোগীদের ভুলে যাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিটি মানুষের রোগের প্রকোপ, শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে কী ধরনের এক্সারসাইজ করবেন, ফিজিওথেরাপিস্ট সেটা প্ল্যান করে দিবেন। মনে রাখবেন, সুস্থ জীবনের জন্য এক্সারসাইজের কোনো বিকল্প নেই।

ব্রেইন গেমস

বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ যখন তার মনকে কোনো কাজে ব্যস্ত রাখে, তখন তাদের চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে। কিছু গেমস যেমন- পাজল, শব্দ জট, দাবা, বিভিন্ন ধরনের ধাঁধা সমাধানের মতো কিছু গেমিং এক্সারসাইজ আছে, যা করলে মেমোরি লস প্রতিরোধ করা যায়।

 

বয়স বাড়তে থাকলে এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তির প্রতি যত্ন নিতে হবে আলাদাভাবে। সেই সাথে আপনার নিজের অথবা পরিবারের কারো এমন সমস্যা হয়ে থাকলে একজন গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্টের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।

ছবিঃ সাটারস্টক

The post ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে কী ধরনের এক্সারসাইজ করবেন? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/1wp2Z4S
Arfatun Nabila

Comments

Popular posts from this blog

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...

বিবি ক্রিম vs সিসি ক্রিম | স্কিন টাইপ অনুযায়ী কোনটি আপনার জন্য স্যুইটেবল?

ন্যাচারাল মেকআপ লুকের জন্য এখন বিবি ক্রিম ও সিসি ক্রিম বেশ জনপ্রিয়। পার্টি মেকআপ বা ফুল কভারেজ মেকআপের ক্ষেত্রে ফাউন্ডেশন ইউজ করা হয়। কিন্তু যারা রেগুলার হালকা মেকআপ করে বাইরে বের হন, তাদের জন্য বেস্ট অপশন হচ্ছে BB বা CC ক্রিম । কিন্তু আমরা অনেকেই বুঝতে পারি না যে স্কিন টাইপ ও কনসার্ন অনুযায়ী কীভাবে রাইট প্রোডাক্টটি সিলেক্ট করতে হবে। এই দু’টি মেকআপ প্রোডাক্টের বেনিফিট বা কার্যকারিতা নিয়ে আজকের ফিচার। এগুলোর মধ্যে বেসিক ডিফারেন্সটা আসলে কোথায়, সেটাও জানা হয়ে যাবে। বিবি ক্রিম BB (Beauty Balm, Blemish Balm) ক্রিম স্কিনকে ইভেন টোনড করে এবং ব্লেমিশ হাইড করে ফ্ললেস লুক দেয় নিমিষেই। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং এলিমেন্টস থাকে, যার কারণে ড্রাই বা নরমাল স্কিনের জন্য এটি একদম পারফেক্ট। এর টেক্সচার ফাউন্ডেশনের থেকে লাইট, তাই কভারেজটাও হয় একদম ন্যাচারাল। মানে একদমই হেভি ফিল হয় না, আর স্কিনটাও পিকচার পারফেক্ট দেখায়। অনেক বিবি ক্রিমে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর বা SPF থাকে। সিসি ক্রিম CC (Color Corrector, Complexion Corrector) ক্রিমের ফর্মুলা লাইট ওয়েট ও লং লাস্টিং। ম্যাট ফর্মুলার হওয়াতে অয়েল...