Skip to main content

ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ করার জন্য মেরুদণ্ডের ব্যথা বাড়ছে কি?

রাবিবের ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, কাল অফিসে কাজের চাপ বেশি ছিলো! অল্প বিশ্রামে এটা এমনিতেই সেরে যাবে, এমনটা ভেবেই সে চুপ করে ব্যথা সহ্য করেছে! কিন্তু ব্যথা ঘাড় ছাড়িয়ে পিঠ, কাঁধ আর হাতে ছড়িয়ে যায়। কিছুতেই ব্যথা কমাতে না পেরে এইবার রাবিব চিকিৎসকের কাছে ছুটে যায়। চিকিৎসক তাকে জানান যে অফিসে দীর্ঘক্ষণ একটানা কম্পিউটারে কাজ করার ফলে তার ঘাড়ের মাংসপেশিতে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু কাজ ছেড়ে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না! তাহলে উপায়? রাবিবের মতো অনেকেই এই সমস্যা ফেইস করছেন। ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ করার ফাঁকে কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই এমন ব্যথায় আর ভুগতে হবে না। আসুন ফিজিওথেরাপি কনসালট্যান্ট অ্যান্ড জেরোন্টলজিস্ট এর কাছ থেকে আমরা জেনে নেই কী করলে এই সমস্যা থেকে রিলিফ পাওয়া যাবে সহজেই।

দীর্ঘমেয়াদী ঘাড় ও কোমর ব্যথা

হাভার্ড মেডিকেল সেন্টারের রিসার্চ অনুযায়ী জানা যায়, দীর্ঘমেয়াদী ঘাড়ে ও কোমর ব্যথার কারণে মানুষের কাজের দক্ষতা কমে আসে, মনে রাখার ক্ষমতা কমে যায়, মুড সুয়িং হয়। ব্যথার কারণে ঘুমেরও সমস্যা হয়। এসব কারণে অফিসের কাজে ব্যাঘাত ঘটে, সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতেও অনেক সময় মানুষ দ্বিধায় ভোগে। কর্মজীবী নারী-পুরুষের দিনের বেশিরভাগ সময় অফিসের চেয়ারে বসে কেটে যায়। এই বসার চেয়ারের উপর নির্ভর করে আপনার মেরুদন্ডের স্বাস্থ্য।

ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ ও সঠিক চেয়ার সিলেকশন

ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ

আজকাল বেশিরভাগ মানুষ পিঠে ব্যথা, মেরুদণ্ডের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যায়। অনেকেই হয়তো জানেন না মেরুদণ্ডের এসব সমস্যার জন্য শুধুমাত্র তার বসার চেয়ারটাই দায়ী। শুধুমাত্র একটি চেয়ার আমাদের কী কী ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী, চলুন জেনে নেই। অফিসে কাজ করার ফলে ব্যথার মূল কারণ হিসাবে তিনটি বিষয়কে দায়ী করা হয়-

  • চেয়ারে বসে দেহকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে টেবিলে কাজ করা
  • ঘাড় বাঁকা করে ফোনে কথা বলা
  • দীর্ঘ সময় ধরে (কাজ করার সময়) দেহের কোনো মুভমেন্ট বা নড়াচড়া না করা

খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়

১। বসার চেয়ার মেরুদণ্ডকে সাপোর্ট না দিলে মাংসপেশিতে টান লাগে; যার ফলে ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা শুরু হয়।

২। অফিসের টেবিলের সাথে চেয়ারের উচ্চতার ব্যালেন্স না হলে কাজ করতে সমস্যা হয়। যেমন- হাতের কব্জিতে ব্যথা হতে পারে।

৩। কম্পিউটারে টাইপ/কাজ বেশি করতে হলে হাতের সাপোর্ট দেয় এমন চেয়ার নির্বাচন করতে হবে।

পিঠে ব্যথা

৪। অফিসের চেয়ার প্রশস্ত ও আরামদায়ক হওয়া উচিত।

৫। চেয়ার নির্বাচনের সময় ঘাড়ের সাপোর্ট পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখে নিতে হবে।

৬। ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ করার সময় সঠিক চেয়ারে না বসতে পারলে কাজের অগ্রগতিতে বাঁধা পায়। সেই কারণে উপযুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত চেয়ার কাজের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখে।

সঠিক চেয়ার নিবার্চন করবেন কীভাবে? 

আপনার উচ্চতার সাথে চেয়ারটি মানানসই কিনা প্রথমেই দেখে নিতে হবে। বসার সিটের উচ্চতা টেবিলের সাথে সমন্বয় করে নিতে হবে। লক্ষ্য করুন পা মেঝেতে লেগে আছে কিনা। বসার পর চেয়ারটি আরামদায়ক লাগছে কিনা সেটাও দেখে নিন। চেয়ারে হাতল থাকতে হবে, হাত রাখার জায়গাটি আরামদায়ক হতে হবে। হাত রাখার পর কাঁধ যেন ঝুলে না যায়। আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। যেমন-

১) আপনার পিঠ চেয়ারের সাথে কতটা অ্যাডজাস্ট হয়েছে, মেরুদণ্ড সোজা হয়ে আছে কিনা, সেটা লক্ষ্য করুন। ব্যাক সাইড প্যাডেড হলে বসার জন্য আরামদায়ক হয়। লম্বা সময় ধরে বসার জন্য এমন চেয়ার ভালো।

২) পিঠের সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। পিঠের নিন্মাংশ চেয়ারের সাথে লেগে থাকলে মেরুদণ্ড সোজা থাকে। পিঠ ব্যথা কমাতে চেয়ারে বসার স্থানটা প্রশস্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। চেয়ারের সিটের আদর্শ প্রশস্ততা হলো ১৭-২০ ইঞ্চি। স্বাস্থ্যসম্মত চেয়ার নিশ্চিত করতে হলে ব্যাক সাপোর্ট, সিটের প্রশস্ততা এসব ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ

৩) আপনি যদি কম্পিউটার/ল্যাপটপে কাজ করেন, তাহলে চেয়ারে বসার পর আই লেভেল ঠিক আছে কিনা সেটাও দেখে নিতে হবে। ল্যাপটপ/কম্পিউটার এমন ভাবে রাখতে হবে, যাতে কাজ করার সময় ঘাড় নিচু করে না রাখতে হয়।

৪) এক এক কাজের জন্য এক এক ধরনের চেয়ার প্রয়োজন। আপনার কাজের ক্ষেত্র বুঝে চেয়ার নির্বাচন করবেন। শুধু অফিসে নয়, বাড়িতেও বসার সময় সঠিক চেয়ারটি বেছে নিন। এতে পিঠে ব্যথাসহ মেরুদণ্ডের সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

পরিত্রাণের উপায়

একটানা বসা বা শোয়া কোনোটাই মেরুদণ্ডের জন্য ভালো নয়। যারা দীর্ঘ সময় বসে কাজ করেন তারা ৩০ মিনিট পর পর একটু হাঁটাহাঁটি করে নিবেন। ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ করার ফাঁকে হাত-পা ছড়িয়ে একটু আড়মোড়া ভেঙে নিবেন। এতে মেরুদণ্ডের আড়ষ্টতা দূর হবে এবং একটানা বসে থাকার ফলে মেরুদণ্ডে যে চাপ পড়ে, সেটাও অনেকটা কমানো যাবে। তিন মাসের বেশি ঘাড় ও কোমর ব্যথা থাকলে সেটা দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী রোগে পরিণত হয়। তাই প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করা উচিত।

ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ করলে শারীরিক আড়ষ্টতা হতেই পারে, এটা খুব স্বাভাবিক। নিজের সুস্থতা নিয়ে একটু সচেতন তো থাকতেই হবে। ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার আপনার খাদ্যতালিকায় রাখুন। দিনের শুরুতে ব্যায়াম বা ইয়োগা করুন। অফিসে লিফট এর বদলে সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে উঠুন। ফিট থাকাটা কিন্তু কঠিন কিছু না। আজ এ পর্যন্তই, সবাই সুস্থ থাকুন।

 

ছবি- সাজগোজ, সাটারস্টক

The post ওয়ার্কপ্লেসে একটানা বসে কাজ করার জন্য মেরুদণ্ডের ব্যথা বাড়ছে কি? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/De1VqMu
Munia

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...