Skip to main content

জিনগত ত্রুটির কারণে শিশুদের কোন রোগগুলো হতে পারে?

একটি সুস্থ সবল শিশুর জন্ম সকল পরিবারেরই কাম্য। কিন্তু জন্মগতভাবে অনেক শিশুই বিভিন্ন রকম ত্রুটি নিয়ে পৃথিবীতে আসে। অনেকেই একে পাপের শাস্তি বা কপাল দোষ হিসেবে আখ্যায়িত করলেও এসব ত্রুটির পিছনে মূল কারণ হচ্ছে জেনেটিক অ্যাবনরমালিটি বা জিনগত ত্রুটি, তাই আগে বিষয়গুলো বুঝতে হবে। জিনগত ত্রুটির কারণে সৃষ্ট অনেক রকম রোগ আছে। তার মধ্যে কমন কিছু রোগ নিয়ে আজকের আলোচনা। চলুন জেনে নেই তাহলে।

সবথেকে কমন জেনেটিক রোগ 

১) জিনগত ত্রুটির কারণে ডাউন সিন্ড্রোম

সাধারণত মানুষের প্রতিটি কোষ এর নিউক্লিয়াসে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু ডাউন সিন্ড্রোম এর ক্ষেত্রে ২১তম ক্রোমোজোম জোড়ার একটি বাড়তি জোড়া থাকে। বর্তমানে যত রকম জেনেটিক ডিজঅর্ডার আছে তার মধ্যে ডাউন সিন্ড্রোম সবচেয়ে কমন। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন রকম শারীরিক ত্রুটির পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব ও মানসিক বিকাশের পার্থক্য দেখা যায়।

জিনগত ত্রুটির কারণে ডাউন সিন্ড্রোম

২) সিস্টিক ফাইব্রোসিস

সিস্টিক ফাইব্রোসিস এমন একটি জেনেটিক রোগ যার ফলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুসফুস ও পরিপাক তন্ত্র। এ রোগের কারণে শরীরের মিউকাস উৎপাদনকারী কোষগুলো আক্রান্ত হয়। সাধারণ মানুষের শরীরে এই কোষগুলো পাতলা ও পিচ্ছিল রস উৎপাদন করে থাকে কিন্তু সিস্টিক ফাইব্রোসিস হলে এই রস ঘন ও আঠালো হয়ে যায়। যার ফলে প্রচন্ড কাশি, ঘন ঘন ফুসফুসের ইনফেকশন, সাইনুসাইটিস ইত্যাদি সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

৩) থ্যালাসেমিয়া

বর্তমান বিশ্বে শিশুদের গুরুতর রোগগুলোর মধ্যে থ্যালাসেমিয়া অন্যতম। সন্তানের দেহে থ্যালাসেমিয়া মেজর তখনই দেখা দেয় যখন মা-বাবা দুইজনই এই রোগের বাহক হন। তাই ইলেক্ট্রোফোরেসিস (electrophoresis) পরীক্ষার মাধ্যমে আগেই নিশ্চিত হতে হবে যে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে থ্যালাসেমিয়া বাহক কিনা। দেহের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনকারী কোষগুলোর মিউটেশন এর কারণে যে ত্রুটি দেখা যায় তার ফলেই থ্যালাসেমিয়া হয়ে থাকে। এই ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন এর কারণে লোহিত রক্ত কণিকার আয়ু কমে যায় এবং লোহিত রক্ত কণিকাগুলো সহজেই ভেঙে যায়। ফলে শরীরে দেখা দেয় মারাত্মক রক্তশূন্যতা।

৪) সিকেল সেল অ্যানিমিয়া

মানব দেহের স্বাভাবিক লোহিত রক্ত কণিকাগুলো নমনীয় ও ডিস্ক আকার যুক্ত হয়। কিন্তু সিকেল সেল অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে কিছু কিছু লোহিত রক্ত কণিকা অর্ধ চন্দ্রাকৃতি বা কাস্তের আকৃতির হয়ে থাকে। যার ফলে সেগুলো ছোট ও সরু রক্তনালীর মধ্য দিয়ে যেতে পারে না। রক্তনালীতে আটকে থাকা এই কণিকাগুলো পরবর্তীতে টিস্যুর ক্ষতি করে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে। এর কারণে শরীরে রক্তপ্রবাহ ধীর হয়ে যায় ও কিছু ক্ষেত্রে রক্তপ্রবাহ ব্লকড হয়ে যায়।

জিনগত ত্রুটির কারণে রোগ

৫) টার্নার সিন্ড্রোম

জিনগত ত্রুটির কারণে এটি হয়, কিন্তু শুধুমাত্র মেয়েদের। একজন নারীর সেক্সুয়াল বা যৌন বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক জিনে ত্রুটির ফলে এই রোগ দেখা দেয়। এই জিনগত ত্রুটি মায়ের থেকেই পরবর্তী প্রজন্মে চলে যায়। এর ফলে উচ্চতা কম হওয়া, ছোট ঘাড়, স্কিনে অনেক বেশি তিল, ডিম্বাশয়ের গঠন না হওয়া, ত্রুটিযুক্ত প্রজনন অঙ্গ, হার্টের সমস্যা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। টার্নার সিন্ড্রোম থাকলে ৯৯% শিশু জন্মের আগে ভ্রূণ অবস্থাতেই মারা যায়।

৬) ডুসেন’স মাস্কুলার ডিস্ট্রফি

জেনেটিক অ্যাবনরমালিটি বা জেনেটিক ত্রুটির কারণে ডিস্ট্রফিন নামক প্রোটিনের অল্টারেশন হয় এবং এই রোগ দেখা দেয়। যার ফলে পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। যেকোনো বয়সেই এই রোগ হতে পারে তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ২-৩ বছর বয়সেই এ রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়। প্রথম দিকে হাঁটাচলায় অসুবিধা হয়। বসে থাকার পর দাঁড়াতে কষ্ট হয় বা শিশু একা একা উঠে দাঁড়াতে পারে না। ধীরে ধীরে পঙ্গুত্ব দেখা দিতে পারে।

৭) ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম

এ রোগ সাধারণত শুধু ছেলেদের হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রোগী প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বাহ্যিকভাবে দেখতে অনেক রোগা ও লম্বা হয়ে থাকে। ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোম এর কারণে পুরুষদের ব্রেস্ট টিস্যু বড় হয় এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার এর ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। সাইকোলজিক্যাল কিছু সমস্যাও মাঝে মাঝে দেখা যায়।

জেনেটিক

জেনেটিক রোগের চিকিৎসা

জেনেটিক ত্রুটির ফলে আরও অনেক রকম রোগ হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগের সাধারণত কোনো চিকিৎসা নেই। শুধুমাত্র এই ত্রুটির ফলে শারীরিক যে সমস্যা দেখা দেয় তার সাময়িক চিকিৎসা করা গেলেও পুরোপুরিভাবে নিরাময় হয় না। জেনেটিক ত্রুটি ঠিক কী কারণে হয়ে থাকে তা এখনও অজানা। তবে প্রেগনেন্সিতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন খাওয়া, রেডিয়েশন, বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া, কেমিক্যাল বা রাসায়নিকের সংস্পর্শ, প্রেগনেন্সির শুরুতে ফলিক অ্যাসিড না খাওয়া এসব ক্ষেত্রে জেনেটিক ত্রুটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

প্রেগনেন্সিতে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের জেনেটিক কোনো ত্রুটি আছে কিনা তা জানা যায়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভাবস্থার নির্দিষ্ট সপ্তাহে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে হবে। হবু মায়ের জন্য সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকবেন সবাই।

 

ছবি- সাটারস্টক

The post জিনগত ত্রুটির কারণে শিশুদের কোন রোগগুলো হতে পারে? appeared first on Shajgoj.



from Shajgoj https://ift.tt/x8ehHQA
Munia

Comments

Popular posts from this blog

Dr. Fariah Sharmeen - Woman Oncology Specialist

Dr. Fariah Sharmeen Specialty - Associate Consultant, Oncology Degree - MBBS, FCPS (Radiotherapy) Chamber: SQUARE Hospitals Ltd. Dhaka Address: 18/F Bir Uttam Qazi Nuruzzaman Sarak, West Panthapath, Dhaka - 1205, Bangladesh Call For Appointment 10616 Call Now About: Dr. Fariah Sharmeen successfully completed her MBBS from Cumilla Medical College, and subsequently completed a one-year internship at BIRDEM Hospital, Dhaka. After completing of the internship, she started her post-graduate training in Medical Oncology at the National Institute of Cancer Research & Hospital. She started her fellowship in Radiotherapy in 2010. She completed 4 years of training at the National Institute of Cancer Research & Hospital on External Beam Radiotherapy Planning and Brachytherapy. She achieved FCPS in Radiotherapy from the Bangladesh College of Physicians & Surgeons (BCPS) in 2015. She has obtained several hands-on pieces of training on Head - Neck, Lung, Genitourina...

রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা | সঠিক ইনার ওয়্যার কীভাবে সিলেক্ট করবেন?

রেগুলার ব্রা আর পুশ-আপ ব্রা, এই দু’টার মধ্যে আসলে পার্থক্য কী আর কখন কোনটা ইউজ করতে হবে, এই বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই অজানা। আমাদের অ্যাকটিভিটি আর আউটফিটের সাথে ইনার ওয়্যারেও ভ্যারিয়েশন আসে। যেমন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছি, এরপর ভার্সিটি বা অফিসে যাচ্ছি, সন্ধ্যায় পার্টি অ্যাটেন্ড করছি। সব সময় কি আমরা সেইম ব্রা পরি? না তো! শাড়ি পরলে এক ধরনের ব্রা পরি, জিমে গেলে অন্য ধরনের ব্রা পরি, বাসায় থাকলে আবার আরেক রকম! কখন কোন ব্রা পরা উচিত বা কোন ড্রেসের সাথে কোনটা মানাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই কনফিউশন আছে। এই বিষয়গুলো এখনও অনেকের কাছেই ট্যাবু। দিন বদলাচ্ছে, এই সামাজিক ট্যাবু থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লঞ্জেরি মেয়েদের জন্য বেসিক একটি জিনিস। তাই লঞ্জেরির ক্যাটাগরিটা আমাদের জেনে রাখা উচিত। পুশ-আপ ব্রা কেন ইউজ করে, এটাই এখনও অনেক মেয়েরা জানে না! রেগুলার ব্রা এর সাথে সাথে নিজের কালেকশনে পুশ-আপ ব্রা কেন রাখা উচিত, সেটা কিন্তু অনেকে বুঝতে পারে না। চলুন এই কনফিউশনগুলো আজ দূর করা যাক। রেগুলার ব্রা vs পুশ-আপ ব্রা    বেসিক রেগুলার ব্রা-এর ক্ষেত্রে ফেব্রিক ম্যাটেরিয়াল ও কমফোর্টের বিষ...

লো পোরোসিটি চুল | কীভাবে চিনবেন এবং সঠিক যত্ন নিবেন?

একরাশ সুন্দর ও ঝলমলে চুল কে না চায়? কিন্তু অনেক সময় সঠিক যত্নের অভাবে সুন্দর চুলগুলো দিন দিন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। চুলের যত্নের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল হলো পোরোসিটি না বুঝে হেয়ার কেয়ার করা। এতে করে চুল আরো ড্যামেজ হওয়ার চান্স থাকে। আজকের ফিচারটি মূলত লো পোরোসিটি হেয়ার কেয়ার নিয়ে। লো পোরোসিটি চুল কীভাবে বুঝবো, কীভাবে যত্ন নিতে হবে, কী ব্যবহার করা যাবে ও যাবেনা ইত্যাদি বিস্তারিত জানবো আজকের ফিচারে। লো পোরোসিটি বলতে কী বোঝানো হয়? পোরোসিটি শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে ছিদ্র। ত্বকে যেমন অসংখ্য পোর বা ছিদ্র থাকে, চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু তাই রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি চুলে অসংখ্য ছিদ্র বিদ্যমান, যার মাধ্যমে চুলে আর্দ্রতা প্রবেশ করে এবং চুল আর্দ্রতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। একেই হেয়ার পোরোসিটি বলে। পোরোসিটি ৩ রকম, হাই, মিডিয়াম ও লো। এই হেয়ার পোরোসিটির মাত্রা প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়ে থাকে। লো পোরোসিটির চুলগুলো কম ছিদ্র সম্পন্ন হয়ে থাকে। লো পোরোসিটি চুলের কিউটিকল লেয়ার খুব শক্ত ভাবে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এ ধরনের চুল আর্দ্রতা সহজে গ্রহণ করতে পারেনা, তবে একবার আর্দ্রতা গ্রহণ করলে এ ধরনের...